তবে কি আমরা একটি সাইকো জাতি হওয়ার পথে?

তবে কি আমরা একটি সাইকো জাতি হওয়ার পথে?

*সাইকো বলতে কী বুঝায় :

মনস্তাত্ত্বিক উন্মাদনা যখন কোনো মানুষের আচরণকে অস্বাভাবিক ও ব্যক্তিত্বহীন পর্যায় পৌঁছে দেয়, সেটাকে আমরা সাইকোসিস সমস্যা বলতে পারি।

চিকিৎসা বিজ্ঞান সাইকোসিসকে একটা বিশেষ ডিজিজ বা রোগ হিসেবে চিহ্নিত করে। সাধারণত এরকম মানসিক রোগীদের বিচারবোধ, ইচ্ছাশক্তি ও কর্মক্ষমতার মারাত্মক অবনতি ঘটে। মনোবীক্ষণের জনক সিগমুন্ড ফ্রয়েড মনে করেন, সাইকোসিস রোগীদের মনোজগত বাস্তবতা থেকে ভিন্ন। তাই নিয়মতান্ত্রিক ও ক্রমধারা অবলম্বন করেই এই রোগের চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়।

* সাম্প্রতিক শিক্ষাক্রমের প্রায়োগিক কিছু চিত্র :

— "ব্যঙ নৃত্য, হাস-মুরগির নৃত্য, গরু নৃত্য, ছাগল নৃত্য"

— "ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকা মিলে দেওরা গানের মত অশ্লীল অর্থপূর্ণ গানের তালে এক সাথে নৃত্য"

— "আলু ভর্তা, ডিম ভাজি, মশারী টাঙানো"

— "জিঙ্গা লালা হু, জিঙ্গা লালা হু বলে বণ্য নৃত্য"

— "পাঞ্জাবি-টুপি ও বোরকা পরে শিক্ষকদের লাল্লারা লাল্লারা রা গোল গোল গানে গানে নৃত্য"

— "টিরিং টিরিং সাইকেল চালাই, ফেরিওয়ালা যায়"

— "হুহা, হুহা করে নৃত্য" (যতসব আজব ও হাস্যকর কাজ)

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এই ধরণের কার্যক্রম কি স্বাভাবিক কোনো বিষয়? যদি স্বাভাবিক না হয় তাহলে এটাকে আপনি সাইকোসিস বলবেন না কেন?

* একটি জাতিকে সাইকো বানানোর পূর্বে জাতির বিবেকদের সাইকো বানানোর প্রজেক্ট :

শিক্ষকদের বলা হয় জাতির বিবেক। অথচ সাম্প্রতিক চিত্র বলছে এই বিবেককে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষের কষ্টের অর্থ খরচ করে ট্রেনিংয়ের নামে শিক্ষকদের সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় ও অস্বাভাবিক কার্যক্রম শিক্ষা দিচ্ছে। আর এই শিক্ষকরাই আগামী দিনে একটি সাইকো জাতি তৈরিতে ভূমিকা পালন করবে।

* একটি বড় প্রশ্ন :

শিক্ষকরা কি এসব বুঝে শুনে করছেন, না কি বাধ্য হয়ে করছেন? এই প্রশ্নের ২টি দিকের উত্তরই জাতি হিসেবে আমাদের জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক বার্তা বহন করে।

* দুটি বিশেষ উদাহরণ :

 এক :

শিক্ষকরা যদি বুঝে শুনেই এসব করেন বা মেনে নেন, তাহলে এই শিক্ষকদের নিকট থেকে আমরা আসলে কী শিখবো?

'গাভী বিত্তান্ত' উপন্যাসে আবু জুনায়েদ চরিত্রের মাধ্যমে লেখক আহমদ ছফা কথিত শিক্ষকদের একটি চিত্র অঙ্কন করেছেন। একজন শিক্ষকের দৌরাত্ম আসলে কতটুকু এবং প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে শিক্ষাঙ্গনে যে নোংরা রাজনীতির চর্চা, তা লেখক চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। সেই ১৯৯৫ সালের রাজনৈতিক নোংরামির প্রেক্ষাপট বর্তমান সময়ে এসে কোথায় গিয়ে ঠেকছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

 দুই :

"হীরক রাজার" গল্পে "যন্তর মন্তর" নামে একটি কক্ষ ছিল।

যারাই রাজার অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলতো তাদেরকে রাজার "যন্তর মন্তর" কক্ষে ঢুকিয়ে বিশেষ থেরাপি দেওয়া হতো। নির্দিষ্ট হাতলে চাপ দিলে কক্ষটিতে জোরে জোরে শব্দ করে নির্দিষ্ট কিছু মন্ত্র উচ্চারণ করা হয়, যা এর ভেতরে থাকা ব্যক্তিদের মাথায় গেঁথে যেত বা "মগজ ধোলাই" হয়ে যেত। কয়েকটি মন্ত্র এমন ছিল-

"জানার কোন শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই"

"লেখাপড়া করে যে, অনাহারে মরে সে"

পরবর্তীতে এরা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে রাজার গুণগান গাইতো। যাকে আমরা এককথায় সাইকোসিস রোগী বলতে পারি।

* আমরা একটি সুস্থ প্রজন্ম চাই :

যেভাবে চলছে এভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে একটি সাইকো জাতিতে পরিণত হওয়া ছাড়া আমাদের কিছুই করার থাকবে না। অভিভাবকরা যদি প্রিয় সন্তানটিকে, আদরের ভাই-বোনকে সাইকোসিস রোগী হিসেবে দেখতে চান, তাহলে জাস্ট নিরবে দেখে যান। আশা করি কেউই এটা চান না।

তাই হোক প্রতিবাদ, হোক প্রতিরোধ। "হীরক রাজা" গল্পের শেষটা কিন্তু অসাধারণ ছিল- "দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খানখান"। সমাজের প্রতিটি কোণ থেকেই আওয়াজ উঠুক। আমরা এমন একটা শিক্ষা ব্যবস্থা ও পাঠ্যক্রম চাই যা সাইকো জাতি তৈরি করবে না। বরং একটি সুস্থ-সুন্দর, সৎ, দক্ষ ও চিন্তাশীল প্রজন্ম গড়ে তুলবে।

মন্তব্য